Saturday, November 23, 2013

লিভারকে সুস্থ রাখুন

সুস্থ জীবনযাপনের জন্য লিভারকে সুরা করা খুবই জরুরি। এটি শরীরের সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ অঙ্গ, যা খাদ্য হজমে সহায়তা করে এবং রাসায়নিক ফিল্টারপ্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করে। তাই লিভার যদি কোনো কারণে কার্যমতা হারায়, তবে মারাত্মক স্বাস্থ্যসমস্যা এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। মদপান বর্জন, একই সূচ ব্যবহারে অনেকে ইঞ্জেকশন নেয়া বন্ধ করা, ভ্যাকসিন নিন হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন হেপাটাইটিস সংক্রমণ থেকে রা করে।

তা ছাড়া বর্তমানে হেপাটাইটিস-এ ভ্যাকসিনও পাওয়া যায়, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ব্যতীত ওষুধ সেবন বন্ধ করা, ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া হার্বাল ওষুধ না খাওয়া, রেজর ব্লেড অন্যের ব্যবহার করা হলে তা ব্যবহার বর্জন, নার্স ডাক্তার রোগীকে ইঞ্জেকশন দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন রোগীর জন্য ব্যবহৃত সূচ নিজের হাতে ফুটে না যায়, কীটনাশক, অ্যারোসল, বিষাক্ত রসায়ন ব্যবহারের সময় মাস্ক, গ্লাভস, লম্বা হাতা জামা, মাথায় টুপি ব্যবহার করা জরুরি, অন্য কারো রক্ত ও শরীরের নির্গত তরল পদার্থ থেকে নিরাপদ থাকুন, ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে দাম্পত্য জীবন যাপন করুন, স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন  শাকসবজি, ফলমূল, উদ্ভিদজাত খাবার খান; অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য পরিহার করে, শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখুন।
মেদভুঁড়ি লিভারে নন-এলকহলিক ফ্যাটি লিভার অসুখ হতে ভূমিকা রাখে। ফলে ফ্যাটি লিভার, হেপাটাইটিস ও সিরোসিস হতে পারে, এ ছাড়া লিভারে হেপাটাইটিস এ ও ই ভাইরাস হেপাটাইটিস সংক্রমণ করতে পারে। এ দু’টি ভাইরাস দূষিত খাদ্য ও পানির মাধ্যমে ছড়ায় এ জন্য নিরাপদ পানি গ্রহণ করা জরুরি। যথাযথভাবে ফুটানো পানি ছাড়া রাস্তাঘাটে, হোটেল-রেস্তোরাঁয় বা ট্যাপের পানি পান করা উচিত নয়। খাবার আগে-পরে, রোগীর সেবা করার পরে হাত অবশ্যই ধোয়া উচিত।

হাইপারটেনশন(উচ্চ রক্তচাপ) ও স্ট্রোক

হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ মানব জাতির অন্যতম ঘাতক রোগ এবং শতকরা ১০-১৫ ভাগ মৃৃত্যুই উচ্চ রক্তচাপের কারণে হয়ে থাকে। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে শতকরা প্রায় ২০ জনই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে।
এই রোগ যথাসময়ে শনাক্ত ও সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে বিভিন্ন প্রকার জটিলতাসহ অকাল মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই এই রোগ সম্পর্কে কিছু ধারণা থাকা সবারই প্রয়োজন।
রক্তচাপ কী?

প্রথমেই দেখা যাক রক্তচাপ বলতে আমরা কী বুঝি। মানুষের হার্ট বা হৃিপণ্ড প্রতিনিয়ত পাম্পের মতো মানব দেহের প্রতিটি কোষে রক্ত সরবরাহ করে থাকে। এই রক্ত প্রবাহমান ধারায় রক্তনালীর দেয়ালে যে বল প্রয়োগ করে তাই রক্তচাপ। একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের (১৮ বছরের ঊর্ধ্বে) রক্তচাপ যদি ১৩০/৮৫ মি.মি. পারদের নিচে থাকে তাহলে এটিকে স্বাভাবিক রক্তচাপ বলা হয়। সাধারণভাবে রক্তচাপ ১৪০/৯০ বা এর বেশি হলে একে উচ্চ রক্তচাপ বলে অভিহিত করা হয়।
সম্ভাব্য উপসর্গ বা লক্ষণ
শতকরা ৩০ ভাগ ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ দেখা নাও দিতে পারে। বাকিদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট, নাক দিয়ে রক্তপড়া, মাথা ব্যথা, মাথা ঝিমঝিম ভাব ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, এই উপসর্গগুলোর উপস্থিতি মানেই উচ্চ রক্তচাপ নয়। আবার এ ধরনের উপসর্গ না থেকেও একজন লোক গুরুতর হাইপারটেনশনে ভুগতে পরে। তাই নিয়মিত রক্তচাপ মাপানো অত্যন্ত জরুরি।
হাইপারটেনশনের জটিলতা
হাইপারটেনশন হলো বিষধর সাপের মতো। চিকিত্সা হলো লাঠি—যা সাপকে বশ করে রাখবে। পরিমিত চিকিত্সা না পেলে এই সাপ শরীরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ছোবল মারবে। যেমন মস্তিষ্কে ছোবল মেরে স্ট্রোক এবং প্যারালাইসিস করবে। হার্টে ছোবল মেরে হার্ট ফেইলিওর এবং হার্ট অ্যাটাক করবে। কিডনিতে কিডনি ফেইলিওর, চোখের অন্ধত্ব এবং পায়ে গ্যাংগ্রিন পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
চিকিত্সা ও প্রতিরোধ
কারণবিহীন উচ্চ রক্তচাপ নিরাময়যোগ্য নয়। কিন্তু পরিমিত চিকিত্সা চালিয়ে গেলে নিয়ন্ত্রণযোগ্য। তবে আজীবন চিকিত্সা চালিয়ে যেতে হবে এবং সুস্থবোধ করলে বা রক্তের চাপ স্বাভাবিক হয়ে গেলে চিকিত্সা কোনো ক্রমেই বাদ দেয়া যাবে না। চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ওজন কমাতে হবে। এর ফলে হৃিপণ্ডের উপর চাপ কম পড়বে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে এবং দেখতেও হবেন আকর্ষণীয়। খাদ্য তালিকায় অতিরিক্ত সোডিয়াম লবণ, চর্বিযুক্ত মাংস, কোলেস্টেরল সমৃদ্ধি খাদ্য বর্জন করতে হবে। পরিমিত বিশ্রাম যেমন নেবেন, তেমনি পরিমিত ব্যায়ামও করবেন এবং জীবনের সবকিছু ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবে নেবেন, মানসিক দুঃশ্চিন্তা পরিহার করবেন। উপরোক্ত সমন্বিত চিকিত্সা পদ্ধতিই আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে।
১৯৯৯ সালের বিশ্ব সংস্থার নির্দেশিকা মতে মানুষের রক্তচাপের মাত্রাকে নিম্নরূপে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
রক্তচাপের ধরন সিসটোলিক ডায়াসটোলিক
কাঙ্ক্ষিত রক্তচাপ <১২০ <৮০
স্বাভাবিক রক্তচাপ <১৩০ <৮৫
উচ্চ মাত্রায় স্বাভাবিক ১৩০-১৩৯ ৮৫-৮৯
হাইপারটেনশন বা উচ্চরক্তচাপ ১৪০-১৫৯ ৯০-৯৯
(গ্রেড-১, Mild)
হাইপারটেনশন ১৬০-১৭৯ ১০০-১০৯
(গ্রেড-২, Moderate)
হাইপারটেনশন ১৮০ ১০০
(গ্রেড-৩, Severe)
দুর্ভাগ্য এই যে, শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। বাকি ১০ ভাগের ক্ষেত্রে কিডনি রোগ, থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের রোগ, জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন, ইত্যাদি কারণ জানা যায়।